আমি আর শুভ নদীর ধারে বসে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছি।।শুভ বলল, “দাখ ভাই জা হবার হয়েছে,ভুলে যা সব।।“ আমি শুধু বসে ঘাড় তা নাড়ালাম।। মনে মনে বলতে লাগলাম, “তুই আর কি বুঝবি রে হতচ্ছাড়া । সারাটা জীবন একা রয়ে গেলি।। যদিও বা আমার জীবন এ একটা প্রেম জুটল তাও এই ভাবে ঠকবো , ভাবতেও পারিনি কোনোদিন। “ সেদিন ভাবলাম যে জীবনে যাই হোক জীবনে ওই রাস্তাই আর নয় ।
শুভ আরও বলতে লাগলো , “ আবার পেয়ে যাবি ,ওই খানিকটা বাস এর মত। একটা যাবে আর একটা আসবে । আচ্ছা তোদের এক্স্যাক্টলি কি হয়েছিল বলত? তোর বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও এই ব্যাপারে মোটে মুখ খুলিসনি তুই ।“
আমার চোখের সামনে ওই পুরনো হিন্দি সিনেমার মত সব টা ফুটে উঠল।।
মাস্টার্সের রেসাল্ট বেড়িয়েছে। ২ নং এর জন্য ফাস্ট ক্লাশ হইনি । মন টা ভারাক্রান্ত। তিতলি দেখলাম ওর ডিপার্টমেণ্ট থেকে হাসতে হাসতে আসছে । আমি ওর মুখ দেখে বুঝতে পারলাম যে খুব ভাল রেসাল্ট ভাল হয়েছে । আমাকে এসেই বলল , “ কিরে।। ওমন চাঁদ পানা মুখ যেন করলার জুস হয়ে আছে কেন? ফার্স্ট ক্লাস হইনি তো কাঁদবি নাকি এখন? “ এই বলে এক অট্ট হাসি দিল ।। ওর এই হাসিটা আমার খুব ভাল লাগে।। মেয়েটার গায়ের রঙ শ্যামলা হলেও কেমন যেন উজ্জ্বল আর প্রানবন্ত ।। এমনি এমনি ভালবাসিনি আমি।। তারপর বগল দাবা করে ক্যান্টিনএ নিয়ে গেল।। আর মন খারাপ হল না।। ৬মাস হয়ে গেল আমাদের প্রেম।।আমি নেট পাশ করে আছি।।তাই চাকরি একটা জুটিয়ে নেব।।তারপরেই ১ বছরের মধ্যে বিয়ের প্রস্তাব দেব।।
কিন্তু সে যে এইভাবে আমার স্বপ্ন হয়েই রয়ে যাবে ভাবিনি।। হঠাত সেদিন এসে খুব কান্নাকাটি করতে লাগলো।। বলল যে ওর বাবা নাকি বিয়ের ঠিক করেছে। ছেলে খুব বড় চাকরি করে ।।অনেক টাকা বেতন।
আমি বোললাম , “ আর কটা দিন অপেক্ষা করনা।। প্লিস ।।“ আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত।। কিন্তু একটা না চাওয়া ঝড় আমার উপর দিয়ে বয়ে গেল। ,বুঝেছিলাম ওকে পাবনা।
বিয়ে হয়ে গেল ওর।।
শুভ ঘাড় নেড়ে বলল , “হু !!বুঝলাম।। শালা ৬মাস এর সম্পর্ক।। যা হয়েছে , হয়েছে ।।ছাড় ।।চল , বাজার যাব।কাজ আছে একটা ।। গাড়িতে স্টার্ট দিতে দিতে ও জিজ্ঞেস করল ,” কতদিন বিয়ে হল যেন? তখন আমি পুনে থেকে কি চলে এসেছি? “
আমি বললাম , “না, বিয়ে ৪মাস হয়ে গেছে ।। কিন্তু ভাই বন্ধুত্ব ৩ বছরের ।।সেটা দ্যাখ ।।“
“শালা তোর প্রেম টা কেমন মরার আগেই পোস্ট মরটেম এর মত।।“বলে হা হা করে হাসতে লাগলো।। আমারও কেমন যেন হাসি পেয়ে গেল।।
বাজারে ঢুকতে না ঢুকতেই হটাত শুভ আমাকে বলল , “আরে ভাই! ওটা তিতলি না ??ওর ছবিই তো তুই আমাকে পাঠিয়েছিলি।।“
নাম টা শুনেই আমার মাথা টা ঘুরে গেল।।আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম, হ্যা। ওটা তিতলি ই।। কিন্তু পাশের জন কে দেখে আমার মাথা নিচে আর পা ওপরে হয়ে গেল।।এ তো আমদের ইউনিভার্সিটির বাংলা ডিপার্টমেণ্টের প্রফেসর, মহিন বাবু।। “
আমার কাছে সব স্পষ্ট হয়ে গেল।।এই জন্যেই তিতলি নাম টা বলতে চায়নি । আমি পাথরের মত দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব ভাবতে লাগলাম। শুভ চেঁচিয়ে বলল , “ আরে, ভাই, চল,রাস্তা আটকে দাড়িয়ে আছিস কেন? “ বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।।
পরে ওকে সব বললাম, ও সব শুনে বলল, “ যা ।অনেক রাত হয়ে গেছে।।বাড়ী চলে যা ।। “
দুদিন পর আমার জন্মদিন ছিল।। ওই দিন শুভ আমার বাড়ি প্রত্যেক বারের মতই এল।। একটা প্যাকেট ধরিয়ে বলল , “ এই নে।।তোর গিফট ।।খুলে দ্যাখ ।“ আমি খুলে দেখি একটা টি-শার্ট ।। তাতে লেখা “ প্রেমটা অভিশপ্ত, কারন প্রেমিকা বিষাক্ত “ ।।
দুজনে দুজনের দিকে চেয়ে হা হা করে হাসতে শুরু করলাম…।।
—-Written by Samapti Ghorai
Very nice..💕 ❤️
Thank you dear.