ইমোশনাল হলে চলবে না , প্রেম জীবনে বার বার আসবে
“ ন্যায়না ম্যাডাম আপকি চায়ে।“ অফিসের কেয়ার টেকার ,মনু দার ডাকে নয়নতারা আবার বাস্তবে ফিরে এল। “ “হ্যাঁ মনু দা, দাও।“ এই বলে নয়না ( এই নামেই সবাই ডাকে ওকে ) চেয়ার থেকে সজা হয়ে বসলো। মনু দা বিহার এর লক।।কলকাতা তে ১০ বছর আছে।খুব ভাল লোক। তারপর মনু দা বলল , “ ম্যাডাম অর কাব তাক কাম করেঙ্গে ? রাত ১ বাজ গ্যায়ে। অর বো বস ভি চলে গ্যায়ে।“ নয়না বলল, “ আরে মনু দা, আমি আছি বলেই তো বস যেতে পারলো। তুমি যাও শুয়ে পড়। আমার দেরি হবে। “ এই শুনে মনু দা চলে গেল। নয়নার ফোন টা বেজে উঠল । “ হ্যাঁ রিঙ্কি বল। “ আজ ও ফিরবিনা তুই ? কি ভেবেছিস বলতো? যে রাত জেগে কাজ করলে,নিজেকে বিজি রাখলে, তোর সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ? “ এই বলে রিঙ্কি একটা হুংকার দিল।। নয়না হেসে বলল , “ আরে ভাই চিল মার। সব ঠিক আছে।।কাল কনফারেন্স আছে, সব ঠিকঠাক হলে প্রমশান বাঁধা। ১ ঘণ্টার মধ্যে আসছি।।ফাইনাল রিভিশন চলছে। রাখলাম। তুই ঘুমিয়ে যা। টাটা ।“
রিঙ্কি ৬ টাই ঘরে ফিরে দেখে, নয়না বারান্দায় বসে আছে। ও তো রিতিমত অবাক। জিজ্ঞেস করল, “ কি ব্যাপার? তুই? এত তাড়াতাড়ি? “ “ হ্যাঁ। ওই চলে এলাম। “ সন্ধ্যে নামাটা দেখতে দেখতেই বলল নয়না। “ তোর প্রমোশন ? “ “হল তো”, নয়না মুখফেরাল না। ১০ সেকেন্ড চুপ করে থেকে রিঙ্কি বলল , “ভাই বেশি পেঁয়াজি আমার পছন্দ নয়। ঝেড়ে কাশ “ এই বলে রিঙ্কি দুম করে চুপ করে গেল। এবার নয়না বলতে লাগলো , “ ভাই এই কম্পানির ৪০% শেয়ার কার জানিস? আনিরুদ্ধ এর । “ রিঙ্কি তো পুরো অবাক। মানে? ও এখানে কথা থেকে এল ? ও তো ব্যাঙ্গালুরু তে ছিল।“ আবার আমাকে কাজ করতে হলে ওর আণ্ডার এই কাজ করতে হবে। সব ঘেটে গেল। জাস্ট ঘেটে দিল ।ভাবলাম এবারে একটা ঠিকঠাক জায়গায় যাব। মা বাবাকে এখানে নিয়ে চলে আসব। মুম্বাই এর মত জায়গায় সেটেল্ড হব । এখন তো দেখছি কাজ করাটাই চাপ হয়ে যাবে। “ রিঙ্কি এক্টূ চুপ করে বলল , “ দ্যাখ কাজ কাজের জায়গায় আর পাস্ট পাস্ট এর জায়গায়। ওসব ছাড়। তুই কাজ কর চুপচাপ । এত নামকরা কম্পানি।সারাজিবন তোর ইচ্ছে ছিল এরকম একটা পোস্ট পাওয়ার।এখন তুই ওই ফালতু ছেলেটার জন্য সব ছেড়ে দিবি ? তা হতে পারেনা। তুই কাজ কর । “ নয়নাও দীর্ঘ নিসাস ফেলে তাই বলল । “ হ্যা।আমিও তাই ঠিক করেছি। “ ২৭ তারিখ ওই কম্পানি তে যেতে হবে। যাই । দেখা যাক।।“
৬ মাস পর——-
সব ঠিকঠাক ই চলছে। ও যতটা ভয় পেয়েছিল কিছু হইনি তেমন। অনিরুদ্ধ একদম এ জ্বালায়নি ওকে। যেহেতু ও ছেড়ে এসেছিল অনিরুদ্ধ কে তাও নিজের কেরিয়ার এর জন্য,তাই বেশ ভয় ভয়ে ছিল। উলটে বস -এমপ্লয়ির সম্পরকটা গড়ে উঠেছে। এদিকে মা বাবা বিয়ের জন্য চাপ দিতে লাগলো। রিঙ্কি ও বলল বিয়ে টা করে নিতে । মাসি নাকি ভাল একটা ছেলের সন্ধান দিয়েছে। সেও মুম্বাই তে নিজের বিজনেজ করে। ও যাবে কাল দেখা করতে । ভাবল এবার শেটেল্ড হওয়া দরকার। ও এটাও ভাবল যে অনিরুদ্ধ এর কথাও বলে দেবে তাকে যদি পছন্দ হয়। দেখা করে ভালই লাগলো নয়নার । কিছুদেন মিশে বিয়েও করে নেবে ঠিক করল। ছেলের তো পছন্দ ছিলই।
আর ৬ মাস সম্পর্ক এগোল। বিয়ে হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। বিয়ের ২দিন আগে থেকে হঠাত করে আশ্চর্য কে ফোন এ পাওয়া যাচ্ছে না। তার বাড়ি থেকেও বলতে পারছেনা কিছু। থানায় খবর দেওয়া হল। তারা মিসিং ডাইরি নিল। কিন্তু কোন খবর পাওয়া গেল না। বিয়ের পরের দিন , চারদিকে যখন সব অন্ধকার, একটা হর্ন এর আওয়াজ পেল নয়না। ভাবল বোধহয় আশ্চর্য এসেছে। ছুটে বেড়িয়ে গেল, গিয়ে দেখল অনিরুদ্ধ। ও অবাক হয়ে জিজ্ঞস করার আগেই অনিরুদ্ধ বলল , “ তোমার সাথে কিছু পারসনাল কথা আছে। “ বাড়ীরর লোক কে ও বলল ওর অফিস এর বস। তারাও আর কিছু বলল না। অরা দুজনে ছাদ এ গেল। অনিরুধহ বলতে লাগলো , “ কেমন লাগছে নয়না? “ নয়না জিজ্ঞস করল , “ মানে ?” মানে এই যে বিয়ে ভেঙ্গে গেল , ছেলে ছেড়ে পালিয়ে গেল, কেমন লাগছে ? “ বলে মুচকি হাসতে লাগলো। নয়না অবাক হয়ে বলল , “ এই পরিস্থিথি তে তুমি আমার সাথে মজা করছ ? আমি ভাবলাম, তুমি আমাকে সাপোর্ট দিতে এসেছ। আর তুমি এই সব ।।“ বলতে বলতে নয়না কাদতে সুরু করল। অনিরুদ্ধ পকেট থেকে ফোন বের করে একটা ভিডিও দেখাল নয়না কে, যেটা দেখে নয়নার গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। “ মানে ?” তুমি আশ্চর্য কে টাকার লোভ দেখিয়ে এই কাজ করেছ? ছি ছি ।।আমি তো ভাবতেই পারছিনা। “ বলে হাউ হাউ করে কাদতে লাগলো।
“ ইমোশনাল হলে চলবে না, প্রেম জীবনে বার বার আসবে। – এটাই তো বলেছিলে মুকেশ কে আমাকে ছাড়ার সময় ? তোমার কথা তোমাকেই ফিরিয়ে দিলাম। “ ইমোশনাল হলে চলবে না, প্রেম জীবনে বার বার আসবে।“ বলে অনিরুদ্ধ চলে গেল। আর নয়না পাথরের মত দাড়িয়ে রইল।।
—Written By Samapti Ghorai